অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সিরিয়ার পর এবার তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বড় অংকের তহবিল গঠনের আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক এ সংখ্যাটি ১০০ কোটির বেশি ডলারের তহবিল করতে চাইছে। দুই দিন আগে বুধবার সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের আবেদন করে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস গত সপ্তাহে তুরস্ক সফর করেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই তাদের (তুরস্কের) বিপদের সময় পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।’
৬ ফেব্রুয়ারির ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত দক্ষিণ তুরস্কে অন্তত ৩৬ হাজার ১৮৭ জন নিহত হয়েছেন; যেখানে প্রতিবেশী সিরিয়ায় প্রাণ গেছে ৫ হাজার ৮০০ জনের।
তুরস্কে এখনও চলছে উদ্ধার তৎপরতা। তবে উদ্ধার হওয়া মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ১০ দিনেরও বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার কাহরামানমারাস প্রদেশের ধ্বংসস্তূপ থেকে এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।
১৭ বছর বয়সী কিশোরীকে ধসে পড়া অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসাবশেষ থেকে নিরাপদে বের করা হয়েছিল। সম্প্রচারকারী টিআরটি হ্যাবার জানায়, ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ভূমিকম্পের ২৪৮ ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করা হয়।
ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের নিচে এখনও আটকা আছেন অনেক মানুষ। পরিবারগুলো তাদের হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়দের ফিরে পেতে অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। এসবের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দানা বাঁধছে অনেকের মনে। দুর্নীতি করে ভবন নির্মাণ এবং ত্রুটিপূর্ণ নগর উন্নয়নের ফলে এমন বড় ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ অনেক বাসিন্দার।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে তুরস্ক সরকার। ভবন নির্মাণে অনিয়মকারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে আঙ্কারা। ইতোমধ্যে ডেভেলপারসহ শতাধিক সন্দেহভাজনকে আটকের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
সীমান্তের ওপারে ১২ বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ায় শক্ত আঘাত হানে ভূমিকম্পটি। দেশটির সরকার বলছে, তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৪১৪। আর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৪ হাজারের বেশি প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। তবে উদ্ধারকারীরা বলছেন, ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে কাউকে জীবিত পাওয়া যায়নি।
সিরিয়ায় সংঘাতের কারণে ত্রাণ সহায়তা ব্যাহত হয়েছে। ভূমিকম্পের পরপরই তুরস্ক থেকে ডেলিভারি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। জাতিসংঘ যে একটি রুট ব্যবহার করতো, সাময়িকভাবে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দুটি অতিরিক্ত রুট খোলার অনুমোদন দেয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সিরিয়ানদের মধ্যে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জাতিসংঘের ১১৯টি ট্রাক তুরস্ক ও সিরিয়ার বাব আল-হাওয়া এবং বাব আল-সালাম সীমান্ত ক্রসিং ব্যবহার করেছে।
সিরিয়ানদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কাতার। ত্রাণ নিয়ে ১৫টি ট্রাকের একটি কনভয় বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহর আফরিনে পৌঁছেছে। দোহার ত্রাণের মধ্যে রয়েছে খাবার, ওষুধ এবং তাঁবু।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল জগান চাপাগাইন বলেন, ‘সংকট দীর্ঘায়িত হবে। দুই দেশের জন্যই তিনগুণ বেশি সাহায্যের আবেদন করব আমরা।’
সিরিয়া থেকে তুরস্ক যাওয়ার পথে চাপাগাইন আরও বলেন, ‘এর প্রভাব তিন মাসের মধ্যে শেষ হবে না। তাই আমরা ২৪ মাসের পরিকল্পনা নিচ্ছি।’
ইউরোপিয়ান ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইবিআরডি) বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, এ বছর তুরস্কের মোট দেশজ উৎপাদনের এক শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সূত্র: আল জাজিরা
Leave a Reply